মন্ট্রিয়লের মেট্রোরেল
- আপলোড সময় : ২৫-১০-২০২৫ ০৮:৪২:০৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৫-১০-২০২৫ ০৮:৪২:০৩ পূর্বাহ্ন
সুখেন্দু সেন::>
মন্ট্রিয়লের মেট্রোরেলে একটা মায়াবী আকর্ষণ আছে। পাতালপুরীর এই রেলপথ মন্ট্রিয়লের জীবনরেখা। ঝকঝকে পরিচ্ছন্ন কোচ। সুন্দর শৈল্পিক স্টেশন। সকাল-বিকেল ব্যস্ততা, চঞ্চলতা থাকলেও দুপুরবেলা স্টেশনগুলি কেমন নীরবতায় মোড়ানো। আমার মেট্রোতে যাতায়াত সাধারণত ঢিলেঢালা দুপুরেই।
এক প্রান্তের এংগ্রিগনন স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু। ভিড়বাট্টা নেই। পাশের সিটে এক কৃষ্ণসুন্দরী। সামনে একজন গোরা। কয়েক সিট ফাঁকা রেখে ঠোঁটে কড়া লাল মেখে এক বৃদ্ধা। দূরে মাথায় পাগড়ি বাঁধা সর্দারজী। আরেকটু সামনে দু’জন স্বল্পবসনা নারী। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা লেবানিজ, চাইনিজ, পর্তুগীজ, মরোক্কান, ইরানি, ফরাসি, মেক্সিকান। বাঙালিও আছে। সিলেটি কথা হাওয়ায় ভেসে আসে। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ মিলেমিশে একাকার। যেনো চলমান বিশ্ব। সিট খালি থাকলেও একজোড়া যুবক-যুবতী রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি হয়ে কাঁধে কাঁধ রেখে দাঁড়িয়ে।
শার্লিওন স্টেশন। রোমান হরফে লেখা ঈযধৎষবাড়রী . ভাষার কুহকী ধাঁধাঁয় ফরাসি উচ্চারণ শার্লিওন। অনেক নামেই এমন খটকা লাগে। আমাদের পক্ষে উচ্চারণবান্ধব নয়। শার্লিওনে বেশ ক’টি বাংলাদেশী গ্রোসারি সোপ। মার্সি বেঙ্গল থেকে পান, সুপারি কিনি। কখনও লিওনেল গুর্ক্স জংশনে নেমে অন্য লাইনে শেষপ্রান্তের কোটভার্চু। কোনোদিন সেন্ট লরেন্স নদীর গভীর তলদেশ দিয়ে জিন ড্রেপো। হঠাৎ করে নাম না জানা এক স্টেশনে উদ্দেশ্যহীন নেমে পড়ি। কী এক রহস্য পেছনে ফেলে ছন্দময় গতি তোলে মেট্রোরেলটি সুড়ঙ্গ পথে আড়াল হয়ে যায়। ফাঁকা স্টেশন। সুনসান নীরবতা। একজন যাত্রীও নেই। আশ্চর্যজনক সে নির্জনতার মায়াবী টানে পাতালপুরীতে একলা আমি একটি বেঞ্চে বসি। নির্জনতায় বিষণœতার ছোঁয়া। যেনো মন্ট্রিয়লের বুকের গভীরের বিরহবেদন নির্জন প্লাটফর্মে ছড়িয়ে আছে।
মিনিট তিনেকের ব্যবধানে নীরবতা ভেঙ্গে সাঁ সাঁ শব্দ তুলে কেমন সপ্রতিভ আরেকটি ট্রেন এসে ঢুকে। কয়েক সেকেন্ড, একটা শ্বাস ফেলেই চলে যায়। একজন দু’জন নামে। আবার নীরবতা। মেট্রোরেল আসে, আবার যায়। উত্তর আমেরিকার এক মেগাসিটির বুকের গভীরে থেকে আমি তার হৃদস্পন্দন অনুভব করি। গা ছমছম একাকীত্ব উপভোগ করি। অনেকক্ষণ ধরে পাতালপুরীর নীরবতার ভাষা পাঠ করি।
এংগ্রিগনন স্টেশনটি পার্ক ঘেঁষে। সুড়ঙ্গ থেকে বেরুলেই গাছগাছালি জড়িয়ে ধরে। স্টেশন চত্বরে, রাস্তার ধারে ফুলের বাগান। ফরমেসিয়া, টিউলিপ, বাঞ্চবেরি, ড্যান্ডেলিয়ন বাহারি রঙ, রূপ ছড়িয়ে আছে। নীল আকাশ, ঝলমলে রোদ। সাদা মেঘের ভেলায় শরতের আবাহন। মেঘে মেঘে বিনি খামের, বিনি ডাকের চিঠি ঠিকানা খুঁজে খুঁজে দূর প্রবাসেও আমার কাছে ঠিক পৌঁছে গেছে। প্রকৃতির আয়োজনে সে চিঠির আপন পাঠে শারদীয় অনুভব গা ছুঁয়ে যায়।
কানাডার আকাশে বাতাসে শরতের প্রস্তুতি। ম্যাপল পাতারা রঙ বদলাতে শুরু করবে। মন্ট্রিয়লের মেট্রোরেল চলবে শীত, গ্রীষ্ম, শরৎ, বসন্তে। গাই কনকর্ডিয়া, ম্যাকগিল, প্লেস-ডি-আর্টস, স্লোডন, লাসাল আর নাম না জানা সেই স্টেশন যেখানে নির্জন প্লাটফর্মের এক কোণে আমার ভালোলাগা জমা পড়ে আছে। ঘুরেফিরে আবার এংগ্রিগনন। গাছেরা, ফুলেরা এখানে প্রিয়জনের মত অপেক্ষায় থাকে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

সুনামকন্ঠ ডেস্ক